ঢাকা ১০:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কলেজে ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন, ১৪ বছর ধরে অটো চালান

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:০৩:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ এপ্রিল ২০২২
  • ১৭৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আসলে উবারের অটোতে চড়েছিলেন নিকিতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিকিতা লিখেছেন, অটোচালকের এত নম্র ব্যবহার এবং তাঁর এত সাবলীল ইংরেজি শুনে আমি থ হয়ে গিয়েছিলাম। তাঁর কথার উত্তরে শুধু বলেছিলাম— ‘ওকে’। তার পরের ৪৫ মিনিট যে কী ভাবে কেটে গেল এবং ওই সময়ে এত সমৃদ্ধ হলাম তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

অটোচালকের কাছে নিকিতা জানতে চেয়েছেন, ‘আচ্ছা, আপনি এত ঝরঝরে ইংরেজি বলেন কীভাবে?’

অটোচালক জানান, ‘আমার নাম পাতাবি রমন। এমএ, এমএড করেছি। ইংরেজিতে অধ্যাপনা করেছি মুম্বাইয়ের একটি নামকরা কলেজেও। ’ এ পর্যন্ত বলে একটু থেমেছিলেন তিনি। নিকিতা সবে প্রশ্ন করতে যাবেন, ঠিক তার আগেই অটোচালক তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, জানি, আপনার পরের প্রশ্নটা কী হতে চলেছে। নিশ্চয়ই জিজ্ঞাসা করবেন কেন আমি অটো চালাচ্ছি, তাই না?

নিকিতা ঘাড় নেড়ে বুঝিয়ে দিলেন যে, ঠিক এই প্রশ্নটাই করতে চেয়েছিলেন। এবার অটোচালক বলতে শুরু করেন, ‘কর্নাটকে কাজ পাইনি। তাই চলে গিয়েছিলাম মুম্বাইয়ে। সেখানে একটি কলেজে প্রভাষকের চাকরি পাই। ’

তিনি আরো বলেন, ‘কর্নাটকের কলেজগুলোতে যখন চাকরির জন্য আবেদন করি, প্রত্যেক জায়গায় জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল আমি কোন জাতের। বলেছিলাম আমার নাম পাতাবি রমন। এ কথা শুনে তাঁরা আমাকে বলেছিলেন, ঠিক আছে আপনাকে পরে জানাব। ’

কলেজগুলো থেকে এ ধরনের উত্তর পেয়ে বিরক্ত আর হতাশায় কর্নাটক ছেড়ে বাণিজ্যনগরী মুম্বাইয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন রমন। নিজের রাজ্য মুখ ফিরিয়ে নিলেও মুম্বাই কিন্তু মুখ ফেরায়নি। সেখানেই একটি নামকরা কলেজে শিক্ষকতার চাকরি পান। ২০ বছর ধরে শিক্ষকতা করে অবসরের পর আবারো বেঙ্গালুরুতে ফিরে যান রমন।

তিনি বলেন, শিক্ষকদের বেতন ভালো ছিল না। খুব বেশি হলে ১০-১৫ হাজার টাকা। যেহেতু বেসরকারি কলেজে কাজ করতাম, তাই পেনশনও নেই। কিন্তু পেট তো চালাতে হবে।

একটু রসিকতার ছলেই বলেন, বাড়িতে আবার আমার গার্লফ্রেন্ড আছে। অটো চালিয়ে দিনে ৭০০-১৫০০ টাকা আয় করি। তাতেই আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ডের দিব্যি চলে যায়।

গার্লফ্রেন্ডের কথা শুনে নিকিতা হেসে ওঠায়, রমন বলেন, আসলে স্ত্রীকে আমি গার্লফ্রেন্ড বলেই ডাকি।

তিনি আরো বলেন, আমাদের এক ছেলে রয়েছে। সে আমাদের থাকার ঘরের ভাড়া দিয়ে দেয়। সাহায্যও করে। কিন্তু আমরা সন্তানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে চাই না। তারা তাদের মতো জীবন কাটাক। আমরা আমাদের মতো।

নিকিতা লিখেছেন, রমনের সম্পর্কে যতই প্রশংসা করা যায়, শব্দ যেন ততই কম পড়ে যায়। এমন একটা মানুষের সঙ্গে আলাপ হলো, জীবন সম্পর্কে যার কোনো অভিযোগ নেই, কোনো অনুতাপ নেই। এমন মানুষগুলোর কাছ থেকে যেন অনেক কিছু শেখার আছে।

সূত্র: আনন্দবাজার।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কলেজে ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন, ১৪ বছর ধরে অটো চালান

আপডেট টাইম : ১০:০৩:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ এপ্রিল ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আসলে উবারের অটোতে চড়েছিলেন নিকিতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিকিতা লিখেছেন, অটোচালকের এত নম্র ব্যবহার এবং তাঁর এত সাবলীল ইংরেজি শুনে আমি থ হয়ে গিয়েছিলাম। তাঁর কথার উত্তরে শুধু বলেছিলাম— ‘ওকে’। তার পরের ৪৫ মিনিট যে কী ভাবে কেটে গেল এবং ওই সময়ে এত সমৃদ্ধ হলাম তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

অটোচালকের কাছে নিকিতা জানতে চেয়েছেন, ‘আচ্ছা, আপনি এত ঝরঝরে ইংরেজি বলেন কীভাবে?’

অটোচালক জানান, ‘আমার নাম পাতাবি রমন। এমএ, এমএড করেছি। ইংরেজিতে অধ্যাপনা করেছি মুম্বাইয়ের একটি নামকরা কলেজেও। ’ এ পর্যন্ত বলে একটু থেমেছিলেন তিনি। নিকিতা সবে প্রশ্ন করতে যাবেন, ঠিক তার আগেই অটোচালক তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, জানি, আপনার পরের প্রশ্নটা কী হতে চলেছে। নিশ্চয়ই জিজ্ঞাসা করবেন কেন আমি অটো চালাচ্ছি, তাই না?

নিকিতা ঘাড় নেড়ে বুঝিয়ে দিলেন যে, ঠিক এই প্রশ্নটাই করতে চেয়েছিলেন। এবার অটোচালক বলতে শুরু করেন, ‘কর্নাটকে কাজ পাইনি। তাই চলে গিয়েছিলাম মুম্বাইয়ে। সেখানে একটি কলেজে প্রভাষকের চাকরি পাই। ’

তিনি আরো বলেন, ‘কর্নাটকের কলেজগুলোতে যখন চাকরির জন্য আবেদন করি, প্রত্যেক জায়গায় জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল আমি কোন জাতের। বলেছিলাম আমার নাম পাতাবি রমন। এ কথা শুনে তাঁরা আমাকে বলেছিলেন, ঠিক আছে আপনাকে পরে জানাব। ’

কলেজগুলো থেকে এ ধরনের উত্তর পেয়ে বিরক্ত আর হতাশায় কর্নাটক ছেড়ে বাণিজ্যনগরী মুম্বাইয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন রমন। নিজের রাজ্য মুখ ফিরিয়ে নিলেও মুম্বাই কিন্তু মুখ ফেরায়নি। সেখানেই একটি নামকরা কলেজে শিক্ষকতার চাকরি পান। ২০ বছর ধরে শিক্ষকতা করে অবসরের পর আবারো বেঙ্গালুরুতে ফিরে যান রমন।

তিনি বলেন, শিক্ষকদের বেতন ভালো ছিল না। খুব বেশি হলে ১০-১৫ হাজার টাকা। যেহেতু বেসরকারি কলেজে কাজ করতাম, তাই পেনশনও নেই। কিন্তু পেট তো চালাতে হবে।

একটু রসিকতার ছলেই বলেন, বাড়িতে আবার আমার গার্লফ্রেন্ড আছে। অটো চালিয়ে দিনে ৭০০-১৫০০ টাকা আয় করি। তাতেই আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ডের দিব্যি চলে যায়।

গার্লফ্রেন্ডের কথা শুনে নিকিতা হেসে ওঠায়, রমন বলেন, আসলে স্ত্রীকে আমি গার্লফ্রেন্ড বলেই ডাকি।

তিনি আরো বলেন, আমাদের এক ছেলে রয়েছে। সে আমাদের থাকার ঘরের ভাড়া দিয়ে দেয়। সাহায্যও করে। কিন্তু আমরা সন্তানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে চাই না। তারা তাদের মতো জীবন কাটাক। আমরা আমাদের মতো।

নিকিতা লিখেছেন, রমনের সম্পর্কে যতই প্রশংসা করা যায়, শব্দ যেন ততই কম পড়ে যায়। এমন একটা মানুষের সঙ্গে আলাপ হলো, জীবন সম্পর্কে যার কোনো অভিযোগ নেই, কোনো অনুতাপ নেই। এমন মানুষগুলোর কাছ থেকে যেন অনেক কিছু শেখার আছে।

সূত্র: আনন্দবাজার।